কৃতিসন্তানেরা

ফটিকছড়ি উপজেলার গুণীজনেরা

সুজলা-সুফলা নয়নাভিরাম বাংলার একটি ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জনপদ ফটিকছড়ি। পাহাড়, নদী আর সমতলের সংমিশ্রনে উর্বর এই জনপদে অন্ধকার অন্তরীক্ষে প্রোজ্জল জ্যোতিষ্কের মত এখন কিছু ব্যক্তিক্রম ব্যক্তিত্বের আর্বিভাব ঘটে, যারা মরেও চিরদিন অমর হয়ে থাকবে। কেউ বিজ্ঞান আবার কেউ সমাজ সেবায়, কেউবা ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নানাভাবে ফটিকছড়িকে কলঙ্কিত করা হলেও অন্ধকারে আলোর দিশারীর মত বাংলাদেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে ফটিকছড়ির এ সকল সূর্য সন্তানদের অবদান অনস্বীকার্য্য।

পরলোকগত এ সকল উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ফটিকছড়ির গণমানুষের গর্বের ধন। আসুন আমরা তাদের স্মৃতিকে চারিত করে বর্তমান প্রজন্মকে জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত করি।

জমিদার কবি হাসমত আলী (জন্ম-১৮৩২)
জমিদার কবি হাসমত আলী (জন্ম-১৮৩২) ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে মধ্যযুগের শেষ কবি এবং আধুনিক যুগের সন্ধিকালের কবিও বলতে পারি। কারণ ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রচিত তার বিখ্যাত ‘চিনফগপুরশাহ’ কাব্যখানি আধুনিক যুগের। প্রারম্ভিক পর্বে রচিত কবি হাসমত আলী ফটিকছড়ি থানার ভূজপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের কাজী বংশে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতামহ কাজী শাহাবুদ্দীন এই ফটিকছড়িকে সমৃদ্ধ করেছেন ঊনত্রিশটি সেতু নির্মাণ সহ অনেক রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও মসজিদ নির্মাণ করে।



কবি আবদুল মজিদ পন্ডিত
কবি আবদুল মজিদের জন্ম পশ্চিম ভূজপুর গ্রামে। তার হাতে লেখা একটি মুল্যবান পুঁথি পাওয়া গিয়েছে। ফটিকছড়ির ইতিহাস জানার জন্য তাঁর লেখা পুথিটি খুবই সহায়ক।


কবি সাবিরিদ খানঃ 
ফটিকছড়ির সর্বপ্রাচীন কবি সাবিরিদ খান ষোড়শতকের কোন এক সময় নানুপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা নানুরাজার নামানুসারে বর্তমান নানুপুর গ্রামে নামকরণ করা হয়েছে বলে পন্ডিতজনেরা মনে করেন। সাবিরিদ খানের এ পর্যন্ত খন্ডিত তিনটি পুঁথি আবিস্কৃত হয়েছে : বিদ্যাসুন্দর ২। রসূল বিজয় ৩।
 হনিফা ও কয়রাপরী

কবি মোহাম্মদ রজাঃ
ফটিকছড়ি থানার বক্তপুর ইউনিয়নে সপ্তদশ শতকের শেষ দশকে আর এক কীর্তিপুরুষ কবি মোহাম্মদ রজা’র সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি একজন বিদগ্ধ পন্ডিত ও লেখক ছিলেন। তিনি সে সময় পাঁচটি উপাখ্যান কাব্য রচনা করেন।


কবি মোহাম্মদ মুকিমঃ
অষ্টাদশ শতকের কবি মোহাম্মদ মুকিম ফটিকছড়ি থানার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। তাঁর তথ্যমূলক অসাধারণ কাব্য ‘গোলেবকাউলী' চট্টগ্রামের ইতিহাসে অত্যন্ত মূল্যবান দলিল হিসেবে স্বীকৃত। কবি মোহাম্মদ আলীসহ এসব মধ্যযুগীয় কবিগণ সে সময় ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করেও পুরো মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। যা ফটিকছড়িবাসীর জন্য অনন্য গৌরবের বিষয়।


সৈয়দ আবদুল ওয়ারেস (১৮৬৮-১৯২৮)  
আধুনিক কালের প্রথম দিকে বাংলা গদ্যে মুসলমানদের অবদান ছিল খুবই সীমিত। সেই সময়কালে চট্টগ্রাম থেকে যে দু’চারজন মুসলিম মণিষী বাংলা ভাষায় আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদানে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে সৈয়দ আবদুল ওয়ারেস (১৮৬৮-১৯২৮) অন্যতম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার বৃহত্তর ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত ভূজপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ আবদুল ওয়ারেস সহজাত মেধা এবং সৃজনশীল ও মননশীল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর রচিত ‘নীতি দর্পণ’ গ্রন্থটি সাহিত্য প্রতিভার উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থটি তৎকালীন কলকাতার টেক্সটবুক কমিটি কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য পাঠ্য ছিল। চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সম্ভবত সৈয়দ আবদুল ওয়ারেসই প্রথম মুসলিম ব্যক্তি যিনি এই গৌরব অর্জন করেন। তিনি ‘মোক্তব বাল্য শিক্ষা’ নামে আরও একটি পাঠ্য বই রচনা করেন। তখন শিশু শিক্ষায় এই বইটির বহুল প্রচলন ছিল। তাঁর অমূল্য সাহিত্য কর্মগুলো আজ দুর্লভ। অথচ এক সময় চট্টগ্রাম থেকেই সমগ্র বাংলা ভাষা-ভাষীর কাছে তাঁর সাহিত্য কীর্তি তুলে ধরেছিলেন আধুনিক সাহিত্যে ফটিকছড়ির এই মণিষী। 


ড. মুহাম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮১)
বাংলা ভাষা-ভাষী যে ক’জন মণিষী আমৃত্যু নিরলস শ্রম আর মেধা দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এদের মধ্যে ড. মুহাম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮১) একজন। বাংলা ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তন, বাংলা সাহিত্যে মুসলিম অবদানের বৈচিত্র্য, বঙ্গে সুফীগণের আগমন ও সুফীবাদের প্রভাবের ধারা, বাংলা ভাষায় প্রকৃত বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়নের অসাধারণ পদক্ষেপ কতিপয় অমর মণিষীর চরিত্র ও কার্যকলাপ উদ্‌ঘাটনের মতো জটিল বিষয় নিয়ে মুহাম্মদ এনামুল হক যুগান্তকারী মৌলিক গবেষণা করেন। এসব গবেষণা ছাড়াও তিনি একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও প্রকাশক ছিলেন। তার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী।  



অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুল আলম (জন্ম-১৯৪৩)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শামসুল আলম (জন্ম-১৯৪৩) ফটিকছড়ির ধর্মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন গুণী শিক্ষাবিদ ছাড়াও তিনি গবেষণা কর্মেও লিপ্ত আছেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন: জীবন ও কর্ম শিরোনামে বাংলা একাডেমী থেকে ৩৬৫ পৃষ্ঠার গবেষণা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বেগম রোকেয়ার উপর কিশোর জীবনীগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। শিক্ষা এবং গবেষণার ড. মুহাম্মদ শামসুল আলমের অবদান অপরিসীম।


প্রফেসর মনসুর মুসা (১৯৪৫)
তিন দশকের অধিককালে ধরে মননঋদ্ধ প্রবন্ধ ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে এক বলিষ্ঠ অবদান রেখে আসছেন প্রফেসর মনসুর মুসা (১৯৪৫)।ফটিকছড়ির বর্ধিষ্ণুফটিকছড়ির বর্ধিষ্ণু গ্রাম ধর্মপুরে তাঁর জন্ম। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বাংলা একাডেমীর মহা পরিচালকসহ অনেক প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অনেক গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। এখনো গবেষণারত প্রফেসর মনসুর মুসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা ইনস্টিটিউটে এখনো প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন।


সুব্রত বড়ুয়া (১৯৪৬)
দীর্ঘসময় বাংলা একাডেমীতে পরিচালক হিসেবে কর্মরত সুব্রত বড়ুয়া (১৯৪৬) ফটিকছড়ির চিলোনীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা কথা সাহিত্য এবং প্রবন্ধ সাহিত্যকে হৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনেকখানি। তার মৌলিক গ্রন্থ এবং বিজ্ঞানী কাহিনী  রয়েছে। যা পাঠক মহলে সমাদৃত। অবসর জীবনেও তিনি লেখালেখিতে সক্রিয়।


মুহাম্মদ ইদ্রিচঃ
মুহাম্মদ ইদ্রিচ ছিলেন একজন সাহসী এবং সৎ সাংবাদিক। সাংবাদিতার পাশাপাশি তিনি দেশ ও সমাজ নিয়ে প্রতিনিয়তই ভাবতেন বলেই তিনি সমাজের নানা অনুসঙ্গ নিয়ে কলাম লিখতেন। তিনি শুধুমাত্র লিখার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে থেমে থাকেননি। সমাজ থেকে সন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটন করার জন্য তিনি জনগণকে নিয়ে রাস্তায় পর্যন্ত নেমেছেন এবং অনেকাংশেই সফলও হয়েছে। দেশ এবং ফটিকছড়িবাসী সমপ্রতি হারিয়েছে এই মহান মানুষ মুহাম্মদ ইদ্রিচকে। 

লেখক খালেদা হানুম (জন্ম ১৯৪০)  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর বহুমাত্রিক লেখক খালেদা হানুম (জন্ম ১৯৪০) ফটিকছড়ি নানুপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতাও ছিলেন তৎকালীন পোষ্টমাষ্টার জেনারেল। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থের প্রণেতা। তাঁর অন্যতম গবেষণা ‘বাংলাদেশে ছোট গল্প ১৯৪৭-১৯৭০’। লেখালেখিরলেখালেখির ক্ষেত্রে এখনো লেখালেখির ক্ষেত্রে এখনো সক্রিয় অধ্যাপক খালেদা হানুম।


সালমা চৌধুরী (১৯৪১-২০০২)
সালমা চৌধুরী (১৯৪১-২০০২) একজন সমাজসেবক, দক্ষ সংগঠক, শিক্ষাবিদ ছাড়াও সৃজনী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর বেশ ক’টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ফটিকছড়ির এই কৃতি মহিলা ছিলেন ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের যোগ্য কন্যা।


সব্যসাচী রফিক আনোয়ার (১৯৪২)
সরকারী কর্মকর্তা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সব্যসাচী রফিক আনোয়ার (১৯৪২) নানুপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ষাট এবং সত্তর দশকে চট্টগ্রামের শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মাঝপথে থমকে দাঁড়ালেও আবার গতিতে ফিরে আসে। উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ও স্মৃতিকথা মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ পনের এর অধিক। এখনো তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে সক্রিয়া আছেন। 


মৌলবী বদিউল আলমঃ
ফটিকছড়িতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন মৌলবী বদিউল আলম। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষার মতো মহান পেশাকে লালন করেছেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। এই আর্দশ শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক দৌলতপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। ‘অমৃত নির্ঝরকে তাঁর রচিত সাহিত্য সাধনার শ্রেষ্ঠ ফসল বলা যায়। তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী মরহুম এ.কে. ফজলুল হককে এ কাব্যখানি উৎসর্গ করা হয়।


চৌধুরী আহমদ ছফা (১৯৩০-২০০৮)
শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক চৌধুরী আহমদ ছফা (১৯৩০-২০০৮) বৃহত্তর ফটিকছড়ির ভূজপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চার দশকের ও অধিককালে ধরে মহান শিক্ষকতা পেশাকে লালন করে গেছেন সযত্নে। ফটিকছড়ির শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে হৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার অবদান অসাধারণ। ফটিকছড়ির প্রাচীন সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণায় মেতে ছিলেন তিনি। তাঁর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ কালান্তর সাহিত্যে ফটিকছড়ির এক বিস্মৃত অধ্যায় (২০০১) সুধী সমাজে আলোড়িত হয়। এছাড়াও তাঁর আরো উলে­খযোগ্য গবেষণা রয়েছে। সৃজনশীল সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাঁর ব্যাপক পদচারণা রয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তিনি কারাবরণ করেন এবং পাকহানাদার বাহিনীর হাতে স্বপরিবারে লাঞ্জিত হন। এই কৃর্তি পুরুষ চৌধুরী আহমদ ছফার অবদান ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষ চিরদিন স্মরণ করবে।


উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ আলী (জন্ম ১৯৩৪)
কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষা জীবন শেষ করে একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ সফল প্রশাসক ছাড়াও লেখালেখির ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন ফটিকছড়ির কৃতি পুরুষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ আলী (জন্ম ১৯৩৪) বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী প্রফেসর আলী ইংরেজী সাহিত্যে গবেষণার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের দুই প্রধান পুরুষ হাসান হাফিজুর রহমান ও প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান এর কৃতিত্বপূর্ণ সাহিত্যিক অবদানকে বিশ্বসাহিত্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছাতে পেরেছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কর্মরত আছেন।


একেএম এমদাদুল ইসলাম (১৯৩৩-...)
রাজনীতিবিদ এবং লেখক। জন্ম দৌলতপুর ইউনিয়নের ইমামনগর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ ফয়েজ ফটিকছড়ি মুন্সেফ আদালতের আইনজীবী ছিলেন এবং মা জুলেখা বেগম ছিলেন গৃহিণী। লিখিত বই তিনটি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য এবং এদেশে যারা স্মরণ ও বরনযোগ্য এবং আমার আমি।

মোহাম্মদ লোকমান (১৯৩৪-২০০৫)
মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী মোহাম্মদ লোকমান (১৯৩৪-২০০৫) আমৃত্যু ফটিকছড়িতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। জীবনের দীর্ঘসময় তিনি ফটিকছড়িবাসীর পাশে থেকে সেবা দিয়ে গেছেন। একজন তাত্ত্বিক লেখক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন। রোসাংগিরি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ লোকমানের প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে পাঁচটি।


প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম (জন্ম ১৯৩৯)
পৈত্রিক সূত্র ফটিকছড়ির কৃতি সন্তান প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম (জন্ম ১৯৩৯)। চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত গবেষক হিসেবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী। বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি তিনি দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প, ধর্ম, দর্শন, সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্যসহ নানা অনুষঙ্গ নিয়ে কাজ করেছেন। এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ফটিকছড়িবাসীর গর্ব।


মওলানা সৈয়দ ফজলুল্লাহ আল মাইজভান্ডারীঃ
জন্ম ১৯০৪ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৯৩ ইংরেজী
মওলানা শাহ ফজলুল্লাহ বি.টি. আল মাইজভান্ডারী ১৯০৪ ইংরেজীতে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি মহাকবি আলাওলের বড় ভাই শাহ ফরওয়ালের বংশ ধর। তার পূর্ব পুরুষ ব্যবসা ও দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে এদেশে বসবাস করেন। তার পিতা মাতার নাম যথাক্রমে মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও সৈয়দা সালেহা খাতুন তিনি ১৯২২ সালে এফ.এম ১৯২৬ সালে বি.এ ১৯৩৪ সালে চি.টি কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তিনি ফটিকছড়ি করোনেশন হাই স্কুলসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি কংগ্রেস দলীয় সদস্য ছিলেন এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে সাক্ষাত করে মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি মাইজভান্ডার দরবার শরীফে একজন বিশিষ্ট খাদে ও সর্বজন স্বীকৃত শিক্ষাগুরু ছিলেন। তিনি  ১৯৯৩ সালে ২৪ শে অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।


জহুরুল হক চৌধুরী
জন্ম ১৯২৩ ইংরেজী /মৃত্যু ১৯৭০ ইংরেজী

বিশিষ্ট সমাজ সেবী জহুরুল হক চৌধুরী ১৯২৩ সালে ফটিকছড়ি দৌলতপুর গ্রামে এম সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী আবদুল বারী চৌধুরী তাঁর পিতা। তিনি ১৯৪৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এন্ট্রাস পাশ করেন। তিনি অংকে, পালিতে ষ্টার মার্ক পেয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে। বি.এস.সি-তে ভর্তি হন। অসুস্থতার কারণে পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষা দিতে পারেন নি। তিনি এ.কে. খান ম্যাচ কোম্পানী ডাইরেক্টর ছিলেন। ইহা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম বাঙ্গালী মালিকানাধীন ম্যাচ ফ্যাক্টরী। তিনি ১৯৬৮ সালে নাজিরহাট হাসপাতাল, ১৯৬৩ সালে এ,বি,সি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাইজভান্ডার দরবার শরীফ উন্নয়ন কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি নাজিরহাট ডিগ্রী কলেজ, আহমাদিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ম্যাচ ম্যানুফেকচারীং এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি ও ডেলিগেট হিসেবে জাপান সফল করেন। তিনি মাতামুহুরী উড ওয়ার্কস লিমিটেডের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে ৮ই অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।


প্রফেসর আবুল মনসুর ফজুল কবির
জন্ম ১৯১৭ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৮০

প্রফেসর আবুল মনসুর ফয়জুল কবির ১৯১৭ ইংরেজী ২৪শে জানুয়ারী ফটিকছড়ির জাহানপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন জিন্দাপীর মুফতি গরীব উল্লাহ (রা:) তিনি রাউজান হাই স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্র সংসদের সম্পাদক ছিলেন। তিনি কর্ম জীবনে কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী বাণিজ্য কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনি সরকারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ১৯৫৪ সনে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের  ভাইস চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম কাউন্সিলার, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের কার্যকরী সদস্য ছিলেন। তিনি ১৫ বৎসর ধরে ইউ পি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি নাজিরহাট ডিগ্রী কলেজ ও ইসলামীয়া কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮০ ইংরেজীর ২৪ শে জানুয়ারী সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন।


আবুল কাশেম সওদাগর
জন্ম ১৯১৯ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৮৯ ইংরেজী

মরহুম আবুল কাশেম ১৯১৯ ইংরেজীতে ফটিকছড়ির নানুপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব আবদুল মান্নান। স্থানীয় বিদ্যালয়ে তিনি লেখা-পড়া শেষ করে পৈতৃক ব্যবসা বাণিজ্যের হাল ধরেন। তিনি বাংলাদেশ টিম্বার  মার্চেন্ট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, নানুপুর মান্নানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং বেঙ্গল টি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ও কাশেম ফিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। কাঠ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৎকালীন সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে সফর করেন। তিনি ১৯৮৯ ইংরেজীর ৪ঠা সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।


আলহাজ্ব মোশরফ আলী সওদাগর
জন্ম ১৯২৫ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৮৩ ইংরেজী

আলহাজ্ব মোশারফ আলী সওদাগর ১৯২৫ ইংরেজীতে ফটিকছড়ি থানার ধর্মপুর গ্রামে এক  সম্ভ্রান্ত মুসলিম  পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। সমাজ হিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটিয়া সড়কে সর্ব প্রথম লাক্সারী ডিজেল কোচ সার্ভিস প্রবর্তন করেন। যা মোশাররফ আলী রোড নামে পরিচিত। শিক্ষা সমপ্রসারণের লক্ষ্যে ধর্মপুর মোশাররফ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চট্টগ্রাম রাঙ্গামটি সড়কে সর্বপ্রথম লাক্সারী ডিজেল কোচ সার্ভিস প্রবর্তন করেন। যা মোশাররফ আলী রোড নামে পরিচিত। শিক্ষা সমপ্রসারণের লক্ষ্যে ধর্মপুর মোশররফ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি চট্টগ্রাম শহরে ও ফটিকছড়িতে বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সাথে  ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালে হজ্ব পর্ব সমাধা করেন এবং ১৯৮৩ ইংরেজী ১৭ই আগষ্ট ইন্তেকাল করেন।


আলহাজ্ব ডা: রহিম দাদ
জন্ম ১৯০৫ ইংরেজী / মৃত্যু ১৯৭৯ ইংরেজী

আলহাজ্ব ডা: রহিম দাদ ১৯০৫ সালে ১৩ই এপ্রিল ফটিকছড়ির ধর্মপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে দেওয়ান আলী মুন্সির বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম আবদুস সোবহান একজন বিশিষ্ট সমাজ হিতৈষী ছিলেন। তাদের পূর্ব পুরুষ হযরত শাহ কুতুব (রা:) ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে দীনা শরীফ হতে এখানে বসবাস করেন। আলহাজ্ব ডা: রহিমদ দাদ কলিকাতা হোমিও মেডিকেল কলেজ হতে হোমিও ডিগ্রী লাভ করেন। চট্টগ্রামের মোহসীন মাদ্রাসা হতে এন্ট্রাস পাশ করেন। তিনি দেশের আজাদী আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন এবং ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি গরীব দু:স্থদের মিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধপত্র দিতেন। মরহুমের স্ত্রী আলহাজ্ব আমাতুন নবী খানম একজন বিশিষ্ট শিক্ষিকা ছিলেন এবং ১৯৬২ সাল পূর্ব পাকিস্তানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা হিসাবে পুরুষকৃত হন। আলহাজ্ব রহিম দাদ ১৯৭৭ ইং সালে হজ্বব্রত পালন করেন এবং ১৯৭৯ ইংরেজীর ১৭ই মে ইন্তেকাল করেন।


আহমদুল হক চৌধুরী
জন্ম ১৯১৫ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৬৬ ইংরেজী

বিশিষ্ট সমাজসেবী আহমুদুল হক চৌধুরী ১৯১৫ ইংরেজীতে ফটিকছড়ি ধুরুং গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা চুন্নু মিয়া চৌধুরী একজন সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন। তাদের পূর্ব পুরুষ মরহুম হায়দার আলী চৌধুরী এলাকার এক কৃতিমান পুরুষ ছিলেন। তিনি ফটিকছড়ি করোনেশন হাই স্কুল হতে এন্ট্রাস ও চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে কৃতীত্বের সাথে বি,এ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। এছাড়া এলাকার শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। তিনি বার্মার রেঙ্গুনে একজন বিশিষ্ট বাঙ্গালী ব্যবসায়ী ছিলেন। চট্টগ্রাম খুলনা সমুদ্র পথে এয়াকুব চৌধুরী এণ্ড কোম্পানী নামে শিপিং ব্যবসার পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি ৮ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে ১৯৬৬ সালের ১০ শে অক্টোবর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।


বদিউল আলম চৌধুরী
জন্ম ১৯১৯ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৯৪ ইংরেজী

বিশিষ্ট সমাজসেবী বদিউল আলম চৌধুরী ১৯১৯ ইংরেজীতে ফটিকছড়ি হাপানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মাতার নাম যথাক্রমে আবদুর রশীদ চৌধুরী ও ফাতেমা খাতুন। তিনি উত্তর ফটিকছড়িতে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নারায়হাট উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়নহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নারায়্‌নহাট ইউনিয়নের নয় বছর বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মচান্ডে তার দান অপরিসীম। পরবর্তীতে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বার্ধক্য জানিত রোগে তিনি ১৯৯৪ সালে ১০ শে জুলাই ইন্তেকাল করেন।


কবি রাহাত বেগম
জন্ম ১৯১০ ইংরেজী,মৃত্যু ১৯৪৯ ইংরেজী

রাহাত আরা বেগম ১৯১০ সালে কলিকাতায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা ছিলেন শামছুল ওলামা কামাল উদ্দীন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের প্রথম ভারতীয় প্রিন্সিপাল। তিনি বহু বৎসর লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ও ফার্সীর প্রফেসর ছিলেন। তার পিতা অর্থ্যাৎ রাহাত আরা বেগমের দাদা মৌলানা জুলফিকার আলীও একজন মশহুর আলেম ছিলেন। রাহাত আরা বেগমের নানা ছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ। তাদের সঙ্গে শহীদ সোহরাওযার্দী পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। রাহাত আরা বেগম কলকাতা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে লক্ষ্ণৌতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি বাংলা, উর্দু, ইংরেজী ও ফার্সী ভাষাতে পারদর্শী ছিলেন। চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান সিরাজুল ইসলাম এম.এ.বি.এল এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। সিরাজুল ইসলাম বিচার বিভাগে চাকুরী গ্রহন করেন ও আইন সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। তার জনহিতকর কাজের জন্য তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। রাহাত আরা বেগমের গর্ভে খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলামের আটজন সন্তান জন্ম গ্রহন করেন। এদের মধ্যে চার জন ছেলে ও চার জন মেয়ে। তাদের বড় ছেলে ১৯৭৯ সানে এক দুর্গটনায় প্রাণ ত্যাগ করেন। তাদের প্রত্যেক সন্তানই উচ্চ শিক্ষিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর জামাল নজরুল ইসলাম তাদের সন্তানদের একজন। ইনি একজন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিজ্ঞানী। রাহাত আরা বেগম ১৯৪৯ ইংরেজীতে মাত্র ৩৯ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। রাহাত আরা বেগমের উর্দুতে অনুদিত রবি ঠাকুরের ডাকঘর উচ্ছুসিত প্রশংসার দাবী রাখে। রাহাত আরা বেগম ও তাঁর স্বামী খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ডাকঘর উর্দুতে অনুদিত হওয়ার পর ১৯২৭ ইংরেজীতে রবি ঠাকুরের কলিকাতাস্থ জোড়া সাকো নিবাসে গিয়ে রবি ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন। রবি ঠাকুর এতে খুশী হন এবং রাহাত আরা বেগমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাহাত আরা বেগম উর্দুতে বহু ছোট গল্প লিখেছেন। সমপ্রতি নূতন দিল্লী হতে ‘রাহাত আরা বেগম কী আফছানা নিগারী’ নাম করণে একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।


ডা: তারেক মঈনুল ইসলাম
জন্ম ১৯৩৬ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৭৯ ইংরেজী

ডা: তারেক মঈনুল ইসলাম ১৯৩৬ সালে ২৬শে এপ্রিল ফটিকছড়ির শাহনগর গ্রামে সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবী খান বাহাদুর সিরাজুল ইসলাম ও মা ছিলেন বিশিষ্ট উর্দু কবি রাহাত আরা বেগম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অব ওয়েষ্ট জার্মানীতে লেখা পড়া করেন। পরবর্তীতে তিনি হোমিওপ্যাথিক উপর উচ্চ ডিগ্রীত লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন সেবামূল সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগীতা দান করেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি একজন গষেক, সমাজ হিতৈষী, সঙ্গিত প্রিয়, লেখক, শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ১৩ই অক্টোবর চট্টগ্রামের দেওয়ান হাট ব্রীজের এক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। তার স্ত্রী মিসেস দিলারা ইসলাম চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এবং মেয়ে অধ্যাপিকা মাহে নুর কুদসী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।


ভিক্ষু এইচ সুগত প্রিয়
জন্ম ১৯৫২ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৯৪ ইংরেজী

ভিক্ষু এইচ সুগত প্রিয় (গৃহী নাম-সুবাস চন্দ্র বড়ুয়া)

১৯৫২ ইংরেজীতে ফটিকছড়ি থানার হারুয়ালছড়ি গ্রামে সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মাতার নাম যথাক্রমে প্রয়াত অর্পন চরন বড়ুয়া ও প্রয়াত মান্দা বড়ুয়া। তার দীক্ষা গরু ছিলেন প্রখ্যাত বৌদ্ধ দার্শনিক পন্ডিত ধর্মাধার মহাথের। দীক্ষা পান ১৯৭৯ ইংরেজী কলিকাতার ধর্মাকুব বিহারে। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। তিনি হারুয়ালছড়ি বৌদ্ধ সমাজ কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, জোবরা সুগত বিহার ও গুনালংকার অনাথ আশ্রমের পরিচালক, কদলপুর সুধামানন্দ বিহারের পরিচালক, আসন সেবক পালিক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ভিক্ষু প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রে মহা-পরিচালক মহামন্ডল কল্যাণ সংস্থার সহা সচিব ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুব মন্ত্রণালয় হতে রাউজানের শ্রেষ্ঠ সমাজ কর্মী হিসেবে পদক পান। তিনি ১৯৯৪ সালের ২৪শে অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।


আলহাজ্ব এম.এ. কবির
জন্ম ১৯৩৯ ইংরেজী/মৃত্যু ১৯৮৬ ইংরেজী

আলহাজ্ব এম.এ. কবির ১৯৩৯ সালে ফটিকছড়ির কাঞ্চন নগরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী হাফিজুর রহমান। এম,এ কবির ১৯৫৭ সালে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ স্কুল হতে এন্ট্রাস পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে পৈতৃক ব্যবসায়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান হয়ে দুবাই চলে যান। সেখানে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সফলতা লাভ করেন। ১৯৬১ সালে বিয়ে করেন। ১৯৭৬ সালে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে দুবাই হতে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ব্যবসা বাণিজ্য উপলক্ষ্যে পৃথিবীর অনেক দেশে ভ্রমণ করেন। মনসুর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলমগীর কবির তার জেষ্ঠ্য পুত্র। তিনি দেশে অনেক জনহিতকর কাজ করেন। এ বিশিষ্ট সমাজসেবী ১৯৮৬ সালে ২৭শে জুলাই ইন্তেকাল করেন।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Bluehost Review