কিছু কথা
১৯৪৬ সাল
হতে ২০০৮ হতে। একটানা ৬২ বছর। অর্ধ শতাব্দীর চাইতেও কিছু বেশি। বৃটিশ
শাসনামলের রাষ্ট্রীয় পরিষদ হতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা।
বৃটিশের লর্ড ষ্টাফোর্ড হতে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
শাসনামল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল হতে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ এ দীর্ঘ
পত্র যাত্রায় উপ মহাদেশের এ অঞ্চলটি দু’দুবার স্বাধীনতা লাভ করে। প্রথমবার
বৃটিশ কবল মুক্ত হয় ১৯৪৭ সালে। দ্বিতীয় বার পাকিস্তানের দুঃশাসন মুক্ত হয়
১৯৭১ সালে। এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এদেশের মানুষ বৃটিশ আমলের সর্বশেষ একটি
আইন সভা, পাকিস্তান আমলের ছয়টি জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক আইন পরিষদ আর
বাংরাদেশ আমলের অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সম্মুখীন হয়েছে। আইন সভা/
পরিষদ/ সংসদ হলো দেশের বা জাতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফোরাম। একটি
এলাকার বিশিষ্ট সন্তানেরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এ আইন সভায় যান। সচেতন
সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এ ফোরামে যাবার জন্য একটি
সুকঠিন নির্বাচনী বৈতরণী পার হন। এ নির্বাচন যুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট
নির্বাচনী আসনের দু’হতে তিন লক্ষ নরনারী ভোটে অংশ নেন। সর্বোচ্চ ভোট
প্রাপ্ত প্রার্থীই শুধু বিজয় মালা গলায় পরেন। এ নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ট
ভোট প্রাপ্তির মাধ্যমে একটি দল বা ব্যক্তি বা ম্যানিফেষ্টো মূলতঃ জয় লাভ
করে। কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বাচিত ব্যক্তি গৌন হয়ে যান। দলই মুখ্য হয়ে
দাঁড়ায়। আবার দেখা যায় নির্বাচিত ব্যক্তি পরবর্তীতে মুল জনগণ হতে বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়েন। জনগণ তাকে আর খুঁজে পায় না।
এ দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ফটিকছড়িতে সার্বিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জনগণের জীবন ধারায় মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি। তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার হার সামান্য বাড়লেও আশানুরূপ বাড়েনি। আজ পর্যন্ত এ থানায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব দিয়ে পৃথক কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কলেজ/মাদ্রাসা) গড়ে উঠেনি। এখানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সরকারী করণ হয়নি। কৃষকের হালের বলদ কমে গেছে। জমি ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকদের ধানের গোলা উঠে গেছে। নবান্নের পিঠে খাওয়া জনগণ ভুলেই গেছে। বাড়ির পার্শ্বের রাস্তা বা খালের সংস্কার হয়নি। জনগণ হালদা, ধুরুং, লেলাং, কংকাইয়া, ফটিকছড়ি, তেল পারই, বারমাসিয়ার ভাঙ্গন হতে রক্ষা পায়নি। বনের পশু পাখি জীবজন্তু হানাদার মানুষের ভয়ে পালিয়ে গেছে। এ সময় আইন শৃঙ্খলাবস্থা চরমভাবে পতিত হয়েছে। জন স্বাস্থ্যের সঠিক কোন পরিবর্তন হয়নি। জনগণ এখনও প্রভাবশালীদের জোর জুলুমের শিকার হয়ে সীমাহীন দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে ঘটে যাওয়া নির্বাচন সমূহ এলাকার সঠিক ভাগ্য পরিবর্তনে উলেখযোগ্য কোন অবদান রাখতে পারেনি। জনগণের ভাগ্য লিপি জগদ্দল কালো পাথরে আটকা পড়ে আছে। এ সময় ফটিকছড়িবাসী সম্মানীত সাংসদের নিকট হতে অনেক সুন্দর সুন্দর নির্বাচনী গল্প/ মেনিফেষ্টো/ ওয়াদা শুনেছেন। কিন্তু রাজনদের গল্পই সার।
এ দীর্ঘ পদ যাত্রার অতীত হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সমূহের সার্বিক অবস্থা, প্রেক্ষাপট, প্রার্থীদের দলীয় পরিচিতি জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক, তাদের অবদান, ব্যর্থতা এ বক্ষমান প্রতিবেদনে বিশেষণ করেছি। এ দীর্ঘ ৫০ বছরে ফটিকছড়ি কেন্দ্রিক/ফটিকছড়িসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে, বেঁচে নেই ৫ জন।
সংসদ সদস্য পরিচিতি
খান বাহাদুর ফরিদ আহমদঃ সময় কাল ১৯৪৬-৫৪ ইংরেজী
খান বাহাদুর ফরিদ আহমদ চৌধুরী ১৯০৮ সালের ২২শে জুলাই রাউজানের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন সভায় ফটিকছড়ি-রাউজান হাটহাজারী আসনে পূর্ব বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে এম,এল,এ নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হাটহাজারীর ব্যারিষ্টার সানা উল্লাহ্। মুসলিম লীগের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচণী কর্মসূচী। মূলতঃ আজাদী আন্দোলনই তার মুখ্য নির্বাচনী কর্মসূচী ছিল। তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় লোকজনের উপর ইংরেজদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ইংরেজ প্রদত্ত খানা বাহাদুর ও এম,এল,এ পদ প্রত্যাখান করেন। তিনি এলাকায় অনেক জনহিতকর কাজ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ জানুয়ারী নিঃসন্তান অবস্থায় ইনতেকাল করেন।
মরহুম এ.কে. খানঃ সময় কাল ১৯৪৬-৫৪ ইংরেজী, ১৯৬২-৬৪ ইংরেজী
বিশিষ্ট বাঙ্গালী মুসলিম শিল্পপতি এ.কে. খান ১৯০৫ সালে চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানার মোহরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহকুমা আসন হতে গভর্ণর জেনারেল কর্তৃক গণ পরিষদে এম.সি.এ নির্বাচিত হন। তিনি এপদে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনায় তার উলেখ্যযোগ্য ভুমিকা ছিলো। পরবর্তীতে তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ফটিকছড়ি-হাটহাজারী-পাঁচলাইশ-বোয়ালখালী আসন হতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম,এন,এ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের মন্ত্রী সভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এলাকায় অনেক জনহিতকর কাজ করেন। উলেখ্য, ফটিকছড়ির বিশিষ্ট সমাজসেবী আবদুল বারী চৌধুরী তার শ্বশুর। এ.কে.খান ১৯৯১ সালের ৩১শে মার্চ সালে ইন্তিকাল করেন।
মওলানা ওবাইদুল আকবরঃ সময় কাল- ১৯৫৪-৫৮ ইংরেজী
বিশিষ্ট আলেম মওলানা ওবাইদুল আকবর ১৯১৫ সালে হাটহাজারীর মন্দাকিনী গ্রামে এক সম্ভ্র্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মওলানা বজলুর রশীদ। তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি আসনে পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যুক্ত ফ্রন্ট হতে এম.পি.এ নির্বাচনী হন। ব্যক্তিগত ও দলীয় মেনিফোষ্টা ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি তার সময়কাল ফটিকছড়ির ধুরুং ইউনিয়নে ইরি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান সহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশ নেন। তিনি পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৯ আগষ্ট ইন্তেকাল করেন।
শ্রী পুর্ণেন্দু দস্তিদারঃ সময় কাল- ১৯৫৪-৫৮ ইংরেজী
প্রবীন রাজনীতিবিদ শ্রী পূর্ণেন্দু দস্তিদার ১৯০১ সালে পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া কমুনিষ্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহকুমার হিন্দু আসনে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মিজোরাম শরণার্থী ক্যাম্পে মারা যান।
মির্জা আবু আহমদঃ সময় কাল- ১৯৬২-৬৫ ইংরেজী, ১৯৬৫-৭০ ইংরেজী
বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি, মির্জা আবু আহমদ ১৯১১ সালে ফটিকছড়ি থানার নানুপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি-হাটহাজারী আসনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। পরবর্তী ১৯৬৫ সালেও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি-মিরশ্বরাই আসনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সংসদীয় জীবনে তিনি হাটহাজারী-নাজিরহাট- সড়ক ও নাজিরহাট-ফটিকছড়ি সড়ক সংস্কার ও সমপ্রসারণ করেন। এছাড়া ধুরুং, লেলাং, হালদা ব্রীজ নির্মাণ, নানুপুর গার্লস হাইস্কুল, ফটিকছড়ি কলেজ, গাউছিয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়াও তিনি বহু জনহিতকর কাজ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে ইন্তেকাল করেন।
মির্জা আবু মনছুরঃ সময়কাল: ১৯৭০-৭৩ ইংরেজী,
১৯৭০ সালে আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আলহাজ্ব নুরুল আলম চৌধুরী সময়কাল: ১৯৯৩-৭৫ ইংরেজী, ১৯৮৬-৮৭ ইংরেজী
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নুরুল আলম চৌধুরী ১৯৪৫ সালে ফটিকছড়ি গোপালঘাটা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি দ্বিতীয় বার ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসন হতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পুনরায় এম.পি নির্বাচিত হন। তিনি তাঁর সময়কাল নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুদান, সড়ক নির্মাণ সংস্কার ও সমপ্রসারণ সহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে নেতৃত্বে দেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য।
জামাল উদ্দিন আহমদ সময়কাল: ১৯৭৯-৮২ ইংরেজী
প্রবীণ রাজনীতিবিদ জামাল উদ্দিন আহমদ ১৯৩২ সালের ১ মার্চ ফটিকছড়ির দৌলতপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনিই একমাত্র চাটগাঁবাসী দেশের শাসনামলে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। এসময় তিনি শিল্পমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তার সময়কালে রাস্তা নিমার্ণ, সমপ্রসারণ, সংস্কার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদানসহ অনেক জনহিতকর কাজ করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।
মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী সময়কাল: ১৯৮৮-৯০ ইংরেজী
মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর ফটিকছড়ি পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। জাসদের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি তার সময়কালে গহিরা-হেঁয়াকো সড়কটির জনপথ বিভাগে অন্তর্ভূক্তি ও বরাদ্দ আদায়, হালদা নদীতে সেতু নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতের ষ্টেশন চালু, চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি গ্যাসলাইন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান দানের ব্যবস্থা নেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সময়কাল: ১৯৯১-৯৬ ইংরেজী
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৫৬ সালে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারের আজিমনগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মাইজভান্ডার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ দলীয় নেমিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি ১৯৯৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং এ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তার সময়কাল বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দেন।
আলহাজ্ব নুরী আরা ছাফা:
১৯৪৭ সালের পটিয়া থানার আলমদার গ্রামে সম্ভ্র্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহিলা আসনে মহিলা এম.পি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এ সংসদ তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল পাশের সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা বিএনপির আহবায়ক। তিনি বিএনপি নেতা ক্যাপটেন (অবঃ) এম.এন ছাপার সহধর্মিনী।
আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ারসময়কালঃ ১৯৯৬-২০০০ ইংরেজী
বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৫ সালের ১২জানুয়ারী ফটিকছড়ির নানুপুরের ডালকাটা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন।
এ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বিগত ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগের মেনিফেষ্টো ছিল তাঁর নির্বাচনী কর্মসূচী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক এবং গোল্ডেন ইন গ্রুপের চেয়ারম্যার এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। বর্তমানে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীঃ
আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল BNP থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক স্পীকার মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে। তিনি এখনো জাতীয় সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেছেন।
একনজরে স্বাধীনতা পরবর্তি ফটিকছড়ির এমপি বৃন্দঃ
১. মির্জা আবু মনছুর - ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২. আলহাজ্ব নুরুল আলম - চৌধুরী ১৯৭৩ সালে প্রথম বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৩. জামাল উদ্দী আহমদ - ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৪. নুরুল আলম চৌধুরী - দ্বিতীয় বারের মতো ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৫. মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী - জাসদ থেকে ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৬. আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী - বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৭. আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার - পর পর দুইবার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৮. আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী - ২০০৮ সালে BNP থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এখনো জাতীয় সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ফটিকছড়িতে সার্বিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জনগণের জীবন ধারায় মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি। তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষার হার সামান্য বাড়লেও আশানুরূপ বাড়েনি। আজ পর্যন্ত এ থানায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব দিয়ে পৃথক কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কলেজ/মাদ্রাসা) গড়ে উঠেনি। এখানে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সরকারী করণ হয়নি। কৃষকের হালের বলদ কমে গেছে। জমি ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকদের ধানের গোলা উঠে গেছে। নবান্নের পিঠে খাওয়া জনগণ ভুলেই গেছে। বাড়ির পার্শ্বের রাস্তা বা খালের সংস্কার হয়নি। জনগণ হালদা, ধুরুং, লেলাং, কংকাইয়া, ফটিকছড়ি, তেল পারই, বারমাসিয়ার ভাঙ্গন হতে রক্ষা পায়নি। বনের পশু পাখি জীবজন্তু হানাদার মানুষের ভয়ে পালিয়ে গেছে। এ সময় আইন শৃঙ্খলাবস্থা চরমভাবে পতিত হয়েছে। জন স্বাস্থ্যের সঠিক কোন পরিবর্তন হয়নি। জনগণ এখনও প্রভাবশালীদের জোর জুলুমের শিকার হয়ে সীমাহীন দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে ঘটে যাওয়া নির্বাচন সমূহ এলাকার সঠিক ভাগ্য পরিবর্তনে উলেখযোগ্য কোন অবদান রাখতে পারেনি। জনগণের ভাগ্য লিপি জগদ্দল কালো পাথরে আটকা পড়ে আছে। এ সময় ফটিকছড়িবাসী সম্মানীত সাংসদের নিকট হতে অনেক সুন্দর সুন্দর নির্বাচনী গল্প/ মেনিফেষ্টো/ ওয়াদা শুনেছেন। কিন্তু রাজনদের গল্পই সার।
এ দীর্ঘ পদ যাত্রার অতীত হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সমূহের সার্বিক অবস্থা, প্রেক্ষাপট, প্রার্থীদের দলীয় পরিচিতি জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক, তাদের অবদান, ব্যর্থতা এ বক্ষমান প্রতিবেদনে বিশেষণ করেছি। এ দীর্ঘ ৫০ বছরে ফটিকছড়ি কেন্দ্রিক/ফটিকছড়িসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে, বেঁচে নেই ৫ জন।
সংসদ সদস্য পরিচিতি
খান বাহাদুর ফরিদ আহমদঃ সময় কাল ১৯৪৬-৫৪ ইংরেজী
খান বাহাদুর ফরিদ আহমদ চৌধুরী ১৯০৮ সালের ২২শে জুলাই রাউজানের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন সভায় ফটিকছড়ি-রাউজান হাটহাজারী আসনে পূর্ব বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে এম,এল,এ নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হাটহাজারীর ব্যারিষ্টার সানা উল্লাহ্। মুসলিম লীগের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচণী কর্মসূচী। মূলতঃ আজাদী আন্দোলনই তার মুখ্য নির্বাচনী কর্মসূচী ছিল। তিনি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় লোকজনের উপর ইংরেজদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ইংরেজ প্রদত্ত খানা বাহাদুর ও এম,এল,এ পদ প্রত্যাখান করেন। তিনি এলাকায় অনেক জনহিতকর কাজ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ জানুয়ারী নিঃসন্তান অবস্থায় ইনতেকাল করেন।
মরহুম এ.কে. খানঃ সময় কাল ১৯৪৬-৫৪ ইংরেজী, ১৯৬২-৬৪ ইংরেজী
বিশিষ্ট বাঙ্গালী মুসলিম শিল্পপতি এ.কে. খান ১৯০৫ সালে চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানার মোহরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহকুমা আসন হতে গভর্ণর জেনারেল কর্তৃক গণ পরিষদে এম.সি.এ নির্বাচিত হন। তিনি এপদে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনায় তার উলেখ্যযোগ্য ভুমিকা ছিলো। পরবর্তীতে তিনি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ফটিকছড়ি-হাটহাজারী-পাঁচলাইশ-বোয়ালখালী আসন হতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম,এন,এ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের মন্ত্রী সভায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পূর্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এলাকায় অনেক জনহিতকর কাজ করেন। উলেখ্য, ফটিকছড়ির বিশিষ্ট সমাজসেবী আবদুল বারী চৌধুরী তার শ্বশুর। এ.কে.খান ১৯৯১ সালের ৩১শে মার্চ সালে ইন্তিকাল করেন।
মওলানা ওবাইদুল আকবরঃ সময় কাল- ১৯৫৪-৫৮ ইংরেজী
বিশিষ্ট আলেম মওলানা ওবাইদুল আকবর ১৯১৫ সালে হাটহাজারীর মন্দাকিনী গ্রামে এক সম্ভ্র্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মওলানা বজলুর রশীদ। তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি আসনে পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যুক্ত ফ্রন্ট হতে এম.পি.এ নির্বাচনী হন। ব্যক্তিগত ও দলীয় মেনিফোষ্টা ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি তার সময়কাল ফটিকছড়ির ধুরুং ইউনিয়নে ইরি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান সহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অংশ নেন। তিনি পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালের ৯ আগষ্ট ইন্তেকাল করেন।
শ্রী পুর্ণেন্দু দস্তিদারঃ সময় কাল- ১৯৫৪-৫৮ ইংরেজী
প্রবীন রাজনীতিবিদ শ্রী পূর্ণেন্দু দস্তিদার ১৯০১ সালে পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া কমুনিষ্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহকুমার হিন্দু আসনে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মিজোরাম শরণার্থী ক্যাম্পে মারা যান।
মির্জা আবু আহমদঃ সময় কাল- ১৯৬২-৬৫ ইংরেজী, ১৯৬৫-৭০ ইংরেজী
বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি, মির্জা আবু আহমদ ১৯১১ সালে ফটিকছড়ি থানার নানুপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি-হাটহাজারী আসনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। পরবর্তী ১৯৬৫ সালেও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের ফটিকছড়ি-মিরশ্বরাই আসনে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এম.পি.এ নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সংসদীয় জীবনে তিনি হাটহাজারী-নাজিরহাট- সড়ক ও নাজিরহাট-ফটিকছড়ি সড়ক সংস্কার ও সমপ্রসারণ করেন। এছাড়া ধুরুং, লেলাং, হালদা ব্রীজ নির্মাণ, নানুপুর গার্লস হাইস্কুল, ফটিকছড়ি কলেজ, গাউছিয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়াও তিনি বহু জনহিতকর কাজ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে ইন্তেকাল করেন।
মির্জা আবু মনছুরঃ সময়কাল: ১৯৭০-৭৩ ইংরেজী,
১৯৭০ সালে আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আলহাজ্ব নুরুল আলম চৌধুরী সময়কাল: ১৯৯৩-৭৫ ইংরেজী, ১৯৮৬-৮৭ ইংরেজী
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, নুরুল আলম চৌধুরী ১৯৪৫ সালে ফটিকছড়ি গোপালঘাটা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি দ্বিতীয় বার ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসন হতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পুনরায় এম.পি নির্বাচিত হন। তিনি তাঁর সময়কাল নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুদান, সড়ক নির্মাণ সংস্কার ও সমপ্রসারণ সহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে নেতৃত্বে দেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য।
জামাল উদ্দিন আহমদ সময়কাল: ১৯৭৯-৮২ ইংরেজী
প্রবীণ রাজনীতিবিদ জামাল উদ্দিন আহমদ ১৯৩২ সালের ১ মার্চ ফটিকছড়ির দৌলতপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনিই একমাত্র চাটগাঁবাসী দেশের শাসনামলে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। এসময় তিনি শিল্পমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তার সময়কালে রাস্তা নিমার্ণ, সমপ্রসারণ, সংস্কার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদানসহ অনেক জনহিতকর কাজ করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।
মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী সময়কাল: ১৯৮৮-৯০ ইংরেজী
মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর ফটিকছড়ি পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। জাসদের মেনিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি তার সময়কালে গহিরা-হেঁয়াকো সড়কটির জনপথ বিভাগে অন্তর্ভূক্তি ও বরাদ্দ আদায়, হালদা নদীতে সেতু নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতের ষ্টেশন চালু, চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি গ্যাসলাইন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুদান দানের ব্যবস্থা নেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সময়কাল: ১৯৯১-৯৬ ইংরেজী
সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৫৬ সালে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারের আজিমনগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মাইজভান্ডার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন। আওয়ামীলীগ দলীয় নেমিফেষ্টো ছিল তার নির্বাচনী কর্মসূচী। তিনি ১৯৯৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন এবং এ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়ি আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তার সময়কাল বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দেন।
আলহাজ্ব নুরী আরা ছাফা:
১৯৪৭ সালের পটিয়া থানার আলমদার গ্রামে সম্ভ্র্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রাম উত্তর মহিলা আসনে মহিলা এম.পি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এ সংসদ তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিল পাশের সাথে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা বিএনপির আহবায়ক। তিনি বিএনপি নেতা ক্যাপটেন (অবঃ) এম.এন ছাপার সহধর্মিনী।
আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ারসময়কালঃ ১৯৯৬-২০০০ ইংরেজী
বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৫ সালের ১২জানুয়ারী ফটিকছড়ির নানুপুরের ডালকাটা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের ফটিকছড়ি আসনে এম.পি নির্বাচিত হন।
এ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও বিগত ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগের মেনিফেষ্টো ছিল তাঁর নির্বাচনী কর্মসূচী। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক এবং গোল্ডেন ইন গ্রুপের চেয়ারম্যার এবং এক কন্যা সন্তানের জনক। বর্তমানে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীঃ
আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল BNP থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক স্পীকার মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে। তিনি এখনো জাতীয় সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেছেন।
একনজরে স্বাধীনতা পরবর্তি ফটিকছড়ির এমপি বৃন্দঃ
১. মির্জা আবু মনছুর - ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২. আলহাজ্ব নুরুল আলম - চৌধুরী ১৯৭৩ সালে প্রথম বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৩. জামাল উদ্দী আহমদ - ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৪. নুরুল আলম চৌধুরী - দ্বিতীয় বারের মতো ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৫. মজাহারুল হক শাহ্ চৌধুরী - জাসদ থেকে ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৬. আলহাজ্ব সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী - বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৭. আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার - পর পর দুইবার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৮. আলহাজ্ব সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী - ২০০৮ সালে BNP থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এখনো জাতীয় সংসদ সদস্যর দায়িত্ব পালন করেছেন।
0 comments:
Post a Comment